- কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো- উত্তম চরিত্র।
-আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৮০১ - হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন কাজ অধিকাংশ লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি উত্তরে বলেছেন, কিয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো- ‘তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র’
–তিরমিজি, হাদিস নং- ২০০৪ - কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অসংখ্য নৈতিক গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই মুমিনগণ সফল, যারা তাদের নামাজে ভীত ও বিনয়ী, যারা নিজেদেরকে অর্থহীন কাজ থেকে বিরত রাখে, যারা জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মতৎপর হয় এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে।
-সূরা আল মুমিনুন: ১-৫
আল্লাহর জন্যে নিজের ভিতরটাকে সুন্দর করার কিছু চর্চা এমন হতে পারে
১. সবসময় সবাইকে নিয়ে ভালো চিন্তা করা। উপযুক্ত প্রমান ছাড়া কাউকে খারাপ ভেবে না বসা।
২. নিয়তেই বরকত! প্রতিনিয়ত নিজের নিয়তকে চেক করা। আমি এই কাজটা কেন করছি? কাকে খুশি করার জন্যে করছি?
৩. অপ্রয়োজনীয় কথা-আলাপে মশগুল না হওয়া। কেউ কথা বলার সময় তাকে কথার মাঝে cut-off না করা (বিঘ্ন না ঘটানো)!
কারণ, যে কথা বলছে সে যদি জ্ঞানী হয়, তাকে শুনতে থাকলে, জ্ঞান বাড়বে! আর যে কথা বলছে, সে যদি মূর্খ হয় তাকে শুনতে থাকলে – ধৈর্য্য বাড়বে! নিশ্চয়ই ধৈর্য্য অর্জন করা জ্ঞান অর্জন করার থেকে বেশি জরুরি!
৪. নিজের সমালোচনা শুনলে ক্ষুব্ধ না হওয়া! চিন্তা করে দেখা – আমার মাঝে কি আসলেই এই ভুল আছে?
ইমাম শাফি’ই (রা:) একবার ক্লাস করাচ্ছিলেন। তখন এক লোক হুড়মুড় করে তার ক্লাসে ঢুকে গেলেন। তার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, “তুমি কি ইমাম শাফি’ই?”। ইমাম বললেন, “জ্বী, আমি শাফি” তখন লোকটি সবার সামনে চেঁচিয়ে ইমামকে বললেন, “তুমি একটা ফাসিক, কাফির এবং জঘন্য প্রকৃতির লোক!”
ইমাম চুপ করে শুনলেন। তারপর দুই হাত তুলে সবার সামনে দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকেন, তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার উপর দয়া করো এবং আমার তাওবা কবুল করে নাও! আর যদি এই ব্যক্তি যা বললেন, সেটা যদি সত্য না হয়, তাহলে তার এ আচরণের জন্যে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া করো এবং তার তাওবা কবুল করে নাও!”
৫. প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সবাইকে মাফ করে দিয়ে অন্তর পরিষ্কার করে ঘুমানো।
৬. কোনো ব্যাপারে অন্তরে অহংকার ঢুকে যাচ্ছে কি না চেক করা।
যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ-ও পাবে না।
৭. যদি কারো উপর হিংসা হতে থাকে, সেই ব্যক্তির নাম ধরে তার সাফল্যের জন্যে বেশি বেশি দুয়া করা।
৮. নিজের ভুল/গুনাহ -র একটা লিস্ট বানানো। নিজের ভুল নিয়ে বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকা, যেন অন্যের ভুল নিয়ে গল্প/গীবত করার কোনো সুযোগ না থাকে।
৯. এমন কোনো কথা কারো পিছনে কখনো না বলা, যেটা সে যদি সামনে থাকতো, তাহলে তার সামনে কখনোই বলা যেত না। এটাই গীবতের ক্লাসিক সংজ্ঞা!
গীবত মৃত ভাইয়ের মাংস খাবার মতন জঘন্য গুনাহ (কুরআন: সুরাহ হুজুরাত)
১০. কথায় বা আচরণে কাউকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করা।
আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের ভিতর-বাহির সব সুন্দর রাখুক।
আমাদেরকে উত্তম চরিত্রের হবার তাওফিক দিন।
আমিন!