কাল আমার বিয়ে, এত রাতে ডায়েরি লিখতে বসলাম। হ্যাঁ কাল আমার বিয়ে, গত তিন বছর প্রেম করার পর কালকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছি, তবে বর আমার প্রেমিক নয়। বাড়ি থেকে ঠিক করা পছন্দের ছেলে। আজকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল একটু আগেই শেষ হল। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। শুধু আমারই ঘুম আসছে না। কি করব বলুন এত সহজে সবটা ভোলা যায়! তিন বছর! কতগুলো মিনিট আর সেকেন্ড হয় তিন বছরে?? এই পুরোটা সময় ধরে তাকে ভালোবেসে গেছি আমি। আর সে? ভালোবাসা তার আমার প্রতি কেমন ছিলো তা বোঝানোর ক্ষমতা স্রস্টা আমাকে দেয়নি। শুধু এতটুকু জানি মা বাবার পর কেউ যদি আমাকে অনেকটা ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা ঈশান। এই তিনটা বছর একটু একটু করে সম্পর্কটা তৈরী করেছি আমরা। খুব যত্নে আগলে রেখেছি আমাদের ভালোবাসাটাকে। কত স্বপ্ন ছিলো দুচোখ ভরা।
কিন্তু প্রবলেমটা কোথায় জানেন? ফ্যামিলি… বাড়ি থেকে কোনোভাবেই মেনে নিল না ওকে। বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। বেকার ছিল ও,, তবুও বাড়িতে ওর কথা বললাম। ও সবার সাথে কথা বলেছে, অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে, আমিও করেছি সাধ্যমত। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
ভালোবাসার টানে ঘর ছাড়তে চাইলাম, কিন্তু ও রাজি হলো না, “সবার মনে কষ্ট দিয়ে সুখী হতে পারব না আমরা, বাবা মা – এর সম্মান রক্ষা করতে না পারলে কেমন সন্তান আমরা? এভাবে সবার থেকে পালিয়ে গিয়ে আমাদের ভালোবাসা স্বীকৃতি পেলেও আমাদের প্রতি আমাদের বাবা মা-এর যে ভালোবাসা আছে তার যে বড্ড বেশি অপমান হয়ে যাবে।” এরকম কত কিছু বোঝাল আমাকে। আমার সেই পাগলটা কখন এতটা বড়ো হয়ে গেছে, এতটা বুঝতে শিখে গেছে তার টেরই পেলাম না আমি। হয়তো সময়ই সব শিখিয়ে দেয় মানুষকে, সময়ই সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
শেষ যেদিন দেখা হলো আমাদের, কেউ কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না। ওর চোখগুলো খুব লাল ছিল, উষ্কখুষ্ক চুল। পুরোটা সময় ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম দুজনেই। দুজনেই যেন ভাষাশূন্য হয়ে পড়েছিলাম।
এইতো কদিন আগেও কথা যেন শেষই হতো না। আর সেদিন শেষবারের মতো কথা বলত গিয়েও কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম ভালো থেকো, ও মাথা নাড়লো শুধু।
কাল আমার বিয়ে, একবুক শূন্যতা নিয়ে যাচ্ছি আর একজনের ঘর পুর্ন করতে, কি অদ্ভূত!!!
Related Images:

মন্তব্য করুন