পেপাল তো আগে থেকেই নাই, তাই এইটা নিয়ে আজ কথা আর নাই বলি। কথা বলব যেই কারন দেখিয়ে বিকল্প ভরসা নেটেলার স্ক্রিল বন্ধ করে রাখা হল তা নিয়ে। পয়েন্ট আকারেই বলি……
জুয়াঃ যেই কারন দেখিয়ে সর্ব প্রথম নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ করা হল তা হল জুয়া। জি হ্যা বর্তমানে চারিদিকে জুয়া নিয়ে ভালই হইচই। কিন্তু প্রশ্ন হল এই জুয়া মানেই কি অনলাইনের জুয়া?
আজকাল রিক্সাতে চরলেও দেখা যাচ্ছে রিক্সাওআলা অন্য কারও সাথে মোবাইলে “জিতলে ৩০০ হারলে ৫০০” এই ধরনের কথা বলতেছে অর্থাৎ জুয়া। আমার যে নাপিত চুল কাটে সেও দেখি উত্তেজনা নিয়ে টিভিটে IPL খেলা দেখে। পাড়ার চায়ের দোকান গুলিতেও একজন আরেক জনের সাথে খেলা নিয়ে বাজি ধরতেছে, জুয়া। প্রশ্ন হল রিস্কাওয়ালা থেকে শুরু করে এদের সবার কি নেটেলার, স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট আছে????
আসলে ৯০-৯৫% জুয়া চলে মুখে মুখে অফলাইনে, আর ৫-১০% জুয়া খেলা হয় অনলাইনে।অর্থাৎ জুয়া শব্দটা যত বৃহৎ আকারে শোনা যায় তার পারসেন্টেজে মাত্র অল্প কিছু ঘটে অনলাইনে কারন অনলাইনে খেলার নলেজ বা টেকনলজিক্যাল জ্ঞান সবার নাই। আমরা যা বুঝেছি তা হল মন্ত্রী মহোদয় ও প্রশাসনের মুলত ভুলটা হয়েছেই এই জায়গাতে। তারা ভেবেছেন এত এত জুয়ার কথা শুনি সব মনে হয় ইন্টারনেটেই ডলার দিয়ে হয়। আসলে কিন্তু তা নয়, জুয়া শব্দের ৯০-৯৫% হল মুখে মুখে চলা জুয়া।
জঙ্গিবাদ ও মানিলন্ডারিংঃ এই ২ টা শব্দও খুব জোরালো যুক্তি সঙ্গত কিছু নয়। জুয়ার কারন দেখানোর কিছুক্ষণ পর জুয়া শব্দের সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও মানিলন্ডারিং শব্দ যোগ করা হয়। বর্তমানে যে কোন কিছুকে সমর্থন জোগাতে এই শব্দ ২ টার ব্যাবহার খুব কমন বিষয় হয়ে গেছে।
স্যারগন বিনয়ের সাথে বলতে চাই ১ কোটি বা ১০০ কোটি টাকা কি এই সকল ই-পেমেন্ট মাধ্যম দিয়ে আনা সম্ভব, ভেবে চিন্তে খোজ নিয়ে বলুন তো? এই জন্য দরকার হুন্ডি। মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে আগেও গিয়েছে/ এসেছে, এখনও যাচ্ছে/ আসতেছে। ডিজিএফে বা অন্য গোয়েন্দা ডিপার্ট্মেন্টে খোজ নেন সব হুন্ডি খবর তাদের কাছে আছেই। এছাড়া এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট, বন্ড সুবিধার নামে লক্ষ লক্ষ ডলার আন্ডার ও ওভার ইনভয়েচ হয়ে যাচ্ছে আসতেছে। তাহলে কেন ২০০-৩০০ ডলারের গেটওয়ে বা মাধ্যমকে মানিলন্ডারিং এ টেনে আনা হল বোধগম্য নয়। এইটা কি নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকার প্রয়াস? উদর পিণ্ডি বুদর ঘারে? নাকি নিজেদেরকে খুব অ্যাক্টিভ প্রমান করার প্রয়াস? নাকি এই সম্ভাবনাময় খাতকে ধ্বংসে দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ? পেপাল তো আগে থেকেই নাই, এখন কোন একটা অজুহাতে নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ করে দিতে পারলে এক পেওনার দিয়ে বাঙালি ফ্রিল্যান্সাররা আর বেশি দূর আগাতে পারবে না। সেক্টরটা তখন এমনিতেই রুগ্ন হয়ে যাবে। বাহ ভালো তো…ভালো না…………..??
স্যারগন ইউরোপ, আমেরিকা, আফগানিস্থান, পাকিস্তানকে কখনও শুনলাম না যে তারা বিশ্ব স্বীকৃত অনলাইন গেটওয়ে গুলিকে কখনও জঙ্গিবাদ বা মানিলন্ডারিং এর দোহাই দিল। পাশের দেশ ইন্ডিয়াও প্রয়োজনের থেকেও বেশি স্বল্পপরিচিত/ অধিক পরিচিত সকল ধরনের গেটওয়ে নিয়ে আসছে। আর আমরা শুধু উল্টা যা আছে তাও বন্ধ করে দিচ্ছি, নতুন নতুন নিয়ে আসা তো আরও দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।
ব্যাংক উইথড্রঃ জ্ঞানের অভাব বলব নাকি জানার ইচ্ছার অভাব বলব?
ক্লাইন্ট তার সুবিধা মত যে ওয়েতেই পেমেন্ট দিক না কেন (নেটেলার, স্ক্রিল, পেপাল, পেওনার) নিজেদের মাঝে দশ হাত বদল হয়ে তা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকেই ক্যাশ আউট হচ্ছে। নেটেলার, স্ক্রিল, পেপাল, পেওনার প্রত্যাকটা গেট ওয়েরই ব্যাংক উইথড্র অপশন রয়েছে। এই পেমেন্ট গেটয়েগুলি সম্পূর্ণ বৈধ ও সিকিউর বলেই ক্লাইন্ট তার দেশ থেকে আমার দেশে ডলার পাঠাতে পারে। তা না হলে তাদের (নেটেলার আর স্ক্রিল)দেশ তাদেরকে মানি লন্ডারিং এর জন্য আটকে দিত। আর এইখানে আমরা তো ডলার আনতেছি সেখানে আরও সহজ ছাড় পাওয়া উচিত।
কিছুদিন আগে এক ছোট ভাই স্ক্রিল থেকে ২৫$ উইথড্র দিয়েছিল যার থেকে ৭$ কেটে নিয়ে ১৪০০ টাকার মত তার ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। (বর্তমান রেট অনুযায়ী $২৫*৮৪=২১০০ টাকা তার হাতে পাবার কথা ছিল) এইটাই হল মুলত ব্যাংকে আনার অনিহার কারন।এক্ষেত্রে যেইটা করা হয় চেনা পরিচিত কাউকে ডলার গুলি দিয়ে দিয়ে একসাথে উইথড্র দেয়া হয়। তাতে ব্যাংক চার্জ পুশিয়ে যার সাথে রেটও ভালো পাওয়া যায়।
আবার অনেক সময় অনেক ফ্রিল্যান্সারের অনলাইনে অনেক কিছু সার্ভিস কিনতে হয় কাজ করতে গিয়ে, অনেক সময় নির্দিষ্ট কাজের জন্য স্পেশালিস্ট হায়ার করতে হয় যার পেমেন্ট ডলারে দিতে হয়। তখন তারা অন্যদের থেকে ডলার কিনে নেয়। তবে সেই ডলারটাও কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভ্যালু আডেড হয়ে আরও বেশি ডলারে পরিনত হয়ে ফিরে আসে।
যার কারনে অনলাইনে মাঝারি ইনকামের ফ্রিল্যান্সারদের ডলার সেল বাই বা নিজেদের মাঝে একচেঞ্জ করতে দেখা গেলেও তা দশ হাত ঘুরে আবার ব্যাংকে চলে আসতেছে।
সিস্টেম লসঃ পূর্বেই বলেছি জুয়া মানেই তা ডলারে জুয়া নয়। ডলারে যে কয় ডলারের জুয়া খেলা হয় তাকে বলব সিস্টেম লস। যে কোন কিছুরই সিস্টেম লস আছে। ইদানিং পুলিশ প্রসাশনের কিছু অসাধু ব্যাক্তির কারনে ব্যাপক সমালোচনা, যা এক ধরনের সিস্টেম লস। হাজার হাজার পুলিশের মাঝে কিছু অসাধু পুলিশ তো থাকবেই তাই বলে কি এখন দেশ থেকে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তুলে দিবেন !!! ৫০০০ ডলার সিস্টেম লস হলেও ৫০০০০ ডলার দেশে ঢোকার ফলেই কিন্তু ৫০০০ লস হচ্ছে। কারন আমাদের দেশে নেটেলার, স্ক্রিলে কিন্তু ডিপোজিট করা যায় না। ফলে বাংলা টাকা ব্যাংক থেকে ৫০০০ ডলারে রুপান্তরিত হয়ে নেটেলার স্ক্রিল বা অন্য গেটওয়েতে জুয়া খেলায় যাচ্ছে না। জুয়া খেলায় যাচ্ছে ঐ ৫০০০০ ডলার ইনকামের ৫০০০ ডলার। এখন সিস্টেম লস কমাইতে গিয়ে ৫০০০০ ডলার ইনকামের সিস্টেমকে কেন বন্ধ করবেন?
মিলিয়ন ডলার প্রশ্নঃ কিছুদিন আগে বেটিং সাইট গুলি বন্ধ করলেন কোন হইচই প্রতিবাদ হল না কিন্তু নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ করাতে হইচই প্রতিবাদ কেন হচ্ছে?
ধরি ১০ জন লোক ডলারে জুয়া খেলে। ৩-৪ মাস আগে বেটিং ওয়েব গুলি ব্লক করলে তারা নিরবে বিকল্প ওয়ে বের করে খেলতে থাকল, তাহলে এখন নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ করার সময়েও তারা নিরবে বিকল্প ওয়ে বের করে খেলতে থাকল না কেন?
আসলে তারা তো বিকল্প ওয়ে জানেই এবং তারা ঐ ভাবে খেলতেই থাকবে। মুলত প্রতিবাদ করতিছে একটা ব্যাংক এর অন্যান্য সাধারন ইউজার গন। ১০ জন অসাধু লোক যদি জুয়ার জন্য নেটেলার, স্ক্রিল ব্যাবহার করে তাহলে ১০০ জন লোক নেটেলার, স্ক্রিল ব্যাবহার করে তাদের ক্লাইন্ট পেমেন্ট রিসিভ করার জন্য। যার ফলেই এখন এত প্রতিবাদি কণ্ঠ। আপনি নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ করেন আর খোলা রাখেন ঐ অসধু ১০ জনের তাতে কিছুই যায় আসে না।
এই সোজা কথা টুকু কর্তা ব্যাক্তিদেরকে আমরা আর কত ভাবে বুঝাবো বলেন?
ডিজিটাল ওয়ার্ক প্লেস + অ্যানালগ পেমেন্টঃ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘরে বসে কাজ কর বিশ্বের যে কোন প্রান্তে কিন্তু পেমেন্ট আনো ডিরেক্ট সোনালি ব্যাংকে। হাইরে সোনালি সপ্ন, নাকি সোনালি সপ্ন দোষ !!! এমন সপ্ন আর সাধ শুধু তথাকথিত বাঙালি টেকনোলজিস্টরাই দেখতে পারে। আর পাশের দেশ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা একই ধরনের ইকনমি প্যাটার্নের হয়েও গাধার বাচ্চার মত সব গেটওয়ে খুলে রেখেছে।
ডিজিটাল দেশ, ডিজিটাল ওয়ার্কার কিন্তু ই-পেমেন্ট অপশন নাই what a funny policy !!!
শেষ পরিনতিঃ এতক্ষণ যা যা বললাম তা কেউ শুনল না, যে যার গো ধরে বসে থাকল। নেটেলার, স্ক্রিল অফ থাকল। কি হবে শেষ পর্যন্ত
১. সর্ব প্রথম যা হবে তা হল যাদের ক্লাইন্ট ছিল নেটেলার, স্ক্রিল নির্ভর তারা ক্লাইন্ট হারাব। ক্লাইন্টের ঠেকা পড়ে নাই আমার জন্য নতুন গেটওয়েতে অ্যাকাউন্ট করে তারপর আমাকে পেমেন্ট দিতে। আমার মত লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, উগান্ডা সব রকম গেটওয়ে দিয়ে রেডি করে রেখেছে। দুধ বেচে কেউ মদ কেনে, কেউ কেনে চাল। মদের অজুহাতে রাজা মশাই আমাদের সবার দুধেল গাইটাই জবাই করে দিলেন !!!!!!!
২. জুয়ার সাইট গুলি আরও ৩-৪ মাস আগেই বন্ধ করেছেন। তাহলে নতুন করে আবার পেমেন্ট গেটওয়ে বন্ধ করলেন কেন? তারমানে আদৌ বন্ধ করতে পারেন নাই। আপনার টেকনোলজি ঐখানে খাটে নাই। তাহলে এবার এইখানে তা কেমনে খাটাবেন? বেট খেলোয়াড়রা ঠিকই বিকল্প পথে খেলে যাচ্ছে এবং এবারও তাই করবে। মাঝখান থেকে সাধারন ইউজারগন বা ফ্রিলেন্সারগন হেরেজমেন্টের শিকার হচ্ছে।
আপনার যত ব্রেন সব ঐ বেট সাইট বন্ধ করতে খাটান, তাহলেই তো হল। তা না করে পেমেন্ট ওয়ে বন্ধ করা অনেক বিষয়েই সন্দেহ তৈরি করতেছে…….. আর বেশি না বলি সমস্যা করতে পারেন।
৩. আশার গুড়েবালি ও অপরাধে বাধ্য করাঃ অলরেডি নিরবেই কোন ফরমাল অফিস-আদালত ছাড়াই আমরা লাখখানিক লোক নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করে নিয়েছি। এখন নিরবেই লক্ষ লোক বেকার হয়ে যাবে আর সেই সাথে আমরা আবারো সরকারের আশার বানী শুনে বিকল্প কোন অনলাইন কাজেও হাত দিব না। কারন সরকার কখন কি করে তার তো কোন ঠিক নাই, ঘর তো একবার পুড়েই দিচ্ছে আবারো তো ঐ আশার বানিতে আশান্বিত হব না। তাহলে এত লোক চলবে কেমনে? বিসিএস বা কোন নতুন চাকরি করারও বয়স নাই আর।
আজ দেখলাম এক ভালো পুলিশ ভাই সপ্ন সুপার শপ থেকে ৩ মাস চাকরি না থাকা এক অসহায় বাবার দুধ চুরির বিল পে করেছেন। প্রশাসন রেডি থাকেন, আগামি ২-৩ মাসের ভিতর আরও লাখ খানেক অসহায় বাবা, অসহায় সন্তনের চুরির বিল মিটিয়ে দিতে।
সেই সাথে নতুন যারা এই সেক্টর নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তাদেরকেও নিরুৎসাহিত করে বলব, ছোট ভাইরা আর এস না এই প্রফেশনে। কোন ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল পরিকল্পন নাই এই সেক্টরে। একেক কর্তার পরিবর্তনে একেক রকম খেয়াল খুশিতে চলতে আছে সব কিছু।
শেষ অনুরোধঃ শেষ অনুরোধ হল যদি নাই খুলে দেন তাহলে অন্তত ২-৩ মাসের জন্য খুলে দেন। পেন্ডিং কাজ ও সব মিলে আটকে পড়া কয়েক লক্ষ ডলার গুলি সবাই যে যার ব্যাংকে উইথড্র দেই। এরপর বন্ধ করে আপনারাও নিশ্চিন্তে ডিজিটাল বাংলাদেশের সপ্ন নিয়ে ঘুমান আর আমরাও ফ্রিলান্সিং পার্ট চুকিয়ে বিদেশে কামলা খাতে যাই।
আরেকটা প্রস্তাব বিবেচনা করতে পারেন তা হল যেহেতু এই IPL কে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে বেশি জুয়া খেলা হয় তাই বছরের এই সময়টাতে টেম্পোরারি নেটেলার, স্ক্রিল বন্ধ রাখতে পারেন। আমরা এই বন্ধের সময়টাতে ঠিকই ক্লাইন্টের কাজ করে গেলাম কিন্তু পেমেন্ট আনলাম খেলা শেষ হলে অর্থাৎ নেটেলার, স্ক্রিল ওপেন করে দেবার পর।
ধন্যকে বাদ = ধন্যবাদে
একজন অসহায় ডিজিটাল কামলা
Related Images:

মন্তব্য করুন