এক ছেলের মনে প্রচণ্ড ইচ্ছা, সে আলেম হইবে। নিজের জীবনকে সে ইসলামের সেবায় উৎসর্গ করিবে। প্রচণ্ড গরীব ঘরের ছেলে সে। Life is full of Struggle…
ছেলেটি পড়ালেখাতেও ভালো। সে যে মাদ্রাসাতে ভর্তি হলো, সেখানে প্রচণ্ড ভালো রেজাল্ট করলো।
এরপর ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো করে পাস করে, সে একজন ‘আলেম’ হিসেবে স্বীকৃতি পাইলো।
ময়মনসিংহ শহরের একদম প্রপারেই, একটা মসজিদের ইমাম হিসেবে তাকে নিয়োগও দেওয়া হলো।
নিয়োগের পর প্রথম জুম্মাবার মানে শুক্রবারের খুতবায়, সে ইসলামের পর্দা প্রথা নিয়ে আলোচনা করলো। সম্পূর্ণ খুতবায়, সে বেপর্দা নারী ও পুরুষ, উভয়কেই ইসলামিক জুড়িসডিকশনের ডিসপোজাল দিলো।
জুম্মার নামাযের পর, সুন্নাত, নফল পড়িয়া সালাম ফিরাইয়া পেছনে তাকাইয়া দেখে, মসজিদ কমিটির সভাপতি তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ইমাম সাহেব মনে মনে খুশি। এতো বড় লোক, তার জন্য অপেক্ষা করছে, বেপারটা জুশ। আলেম হওয়ার বরকত সে বুঝতে পারলো। তাও আবার কর্মজীবনের প্রথম শুক্রবারেই।
কিন্ত মসজিদ কমিটির সভাপতি তাকে যা বললো, এক নিমেষেই সুখ স্বপ্ন ভেঙে গেলো।
সভাপতি তাকে বললো, দেখেন ইমাম সাহেব। আমার সময় সংক্ষিপ্ত। এতো খাউজানি গল্প করতে পারবো না। সোজাসুজি পয়েন্টে আসি। আপনি আমার সাথে ফাইজলামি করেন?
আজকের খুতবায় আপনি আমাকে এবং পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বাজে কথা বলছেন না?
ইমাম সাহেব তো আসমান থেকে পড়লেন। কী বলেন এগুলা? জনাবের কোথাও ভুল হচ্ছে।
সভাপতি খেইপা গিয়ে বললো, আপনার আর এই মসজিদে নামায পড়াইতে হবে না। আপনার বেডিং পত্র নিয়া কালকের মধ্যে বিদায়।
ইমাম সাহেব কিছুই বুঝলো না। পরের দিন যাওয়ার আগে সেখানকার এক দোকানদার কইলো, হুজুর জানেন না? আমাদের সভাপতির ইস্তিরি তো NGO করার নামে, বিভিন্ন পরপুরুষের সাথে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। সভাপতির সাথে থাকে না। তাদের ছেলেও এলাকায় বেলাল্লপনা করে। মেয়েদেরকে উত্যক্ত করে। আপনি যে বয়ান করেছেন, তাতে সব কিছু সভাপতির উপর দিয়ে গেছে।
ইমাম সাহেব প্রচণ্ড আঘাত পাইলেন এই গল্প শুনে।
তিনি চিন্তা করলেন, আর শহরেই থাকমু না। মফস্বলের দিকে চলে যামু। শহরের লোকজনের এতো প্যাচ নিয়া, তার পক্ষে এলেম চর্চা করা সম্ভব না।
তিনি ময়মনসিংহের জামালপুর শহরে চলে গেলেন। মফস্বল শহর৷ ছোট শহর।
সেখানের একটা মসজিদে ইমামতি ধরলেন। খুব বেশি বড় না মসজিদটা। মসজিদের পাশেই তার থাকার ঘর। খাবার আসবে সভাপতির বাসা থেকে।
প্রথম কয়দিন ভালোই যাচ্ছিলো। মফস্বলের লোকজন বেশ ভালো মিশুক। তারা ইমাম সাহেবকে আপন করেও নিলো।
এরপর এলো সেই জুম্মাবার। আজ ইমাম সাহেব, সুদ নিয়ে বয়ান করলেন। সুদ খাওয়ার শাস্তি। সুদের কারণে সামাজিক যে সব সমস্যা, তা নিয়ে জুম্মার খুতবায় কথা বললেন।
দূর্ভাগ্যবশতঃ ইমাম সাহেব এবারও সঠিক Intel পান নাই। মেন্ডেলীয় গোয়েন্দা তথ্য মিস করেছিলেন তিনি। এই মসজিদ কমিটির সভাপতি নিজেই সুদের ব্যবসা করেন। অঞ্চলের সুদের বাজারের একছত্র অধিপতি তাহার। এই কথাটা ইমাম সাহেব জানতেন না। মসজিদ কমিটির সভাপতি তো নামাযেই আসে না।
সো যথারীতি যা হবার তাই হলো। জুম্মার নামাযের পর, খাবার দিয়ে যাওয়ার কথা যে পিচ্চির। সেই পিচ্চি আইলো না। আইলো স্বয়ং সভাপতি। খাবার নিয়ে। খাবার দিয়ে সভাপতি শুধু বললেন, আপনি বিদায়। কাল থেকে অন্য কোথাও জায়গা খুঁজেন।
ভয়াবহ ডিপ্রেসনে পড়লেন এই আলেম। এভাবে চলতে পারে না।
মানুষগুলো এমন কেনো? ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ইমাম সাহেব ঠিক করলেন, আর তিনি কিছুই ওয়াজ করবেন না। তবে এইসব জায়গাতেও তিনি থাকবেন না।
গ্রামের দিকে চলে যাবেন। গ্রামের মানুষ তো এতোটা কুটচাল নিয়ে চলে না।
এবার তিনি জামালপুরের পিঙ্গলহাটি গ্রামের মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগ দিলেন। গ্রামের মানুষের ভালোবাসা, ভক্তি ও শ্রদ্ধা দেখে ইমাম সাহেব ভাবলেন, তিনি তার সঠিক জায়গায় আসছেন।
গাছের প্রথম ফল, মোরগের রানটা তার পাতেই আসে। টাকা পয়সা খুব বেশি পান না। তবে গ্রামে কোন খরচ না থাকাই, পুরো টাকাটাই বাড়িতে পাঠাইতে পারেন।
গ্রামের মসজিদে লোকজন তেমন একটা আসে না। তবে শুক্রবারে মানুষ হয়। কিন্ত এইবার ইমাম সাহেব সতর্ক আছেন। তিনি গার্ড সাবধান!
বয়ানে প্রডাক্টিভ কিছুই বলেন না। খালি কুদরতি চাপা মারেন। উইড়া উইড়া ঘুইরা ঘুইরা কে পানির উপর দিয়ে হেঁটে গেছে এইরকম আজগুবি চাপা মারেন আর মানুষ জুরে জুরে কয় সুবহানাল্লাহ।
যায় হোক, এভাবেই দিন যাইতেছিলো। এক জুম্মাবারে ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছেন। সূরা ফাতিহার পর, সূরা ইয়াসিন শুরু করলেন। “ইয়াসিন… ওয়াল কুরঅানিল হাক্বিম”
নামায শেষ করার পর দেখেন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাম ক্যাশিয়ার তার জন্য ওয়েট করতেছেন।
ইমাম সাহেবের এই Issue তে Past Experience তো খারাপ। তারপরেও, তিনি সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞেস করলেনঃ জি বলেন, জনাব।
সাধারণ সম্পাদক বলিলেনঃ খালি মসজিদ কমিটির সভাপতিই কিন্তু এই মসজিদ চালায় না। বেপারটা মাথায় রাইখেন।
ইমাম সাহেব আসমান থেকে পড়লেন! কী বলেন, কিছুই ত বুঝিনা!
তা বুঝবেন কেনো? ঠিকই তো মসজিদ কমিটির সভাপতির বাপের নামে সূরা পড়ছেন৷ আমার বাপে কি দুষ করছে?
এবারও ইমাম সাহেব কিছু বুঝলো না।
তখন সাধারণ সম্পাদক তারে বললোঃ সভাপতির বাপের নাম ‘ইয়াসীন মোল্লা’.. তারে নিয়ে যেমন আজকে সূরা পড়ছেন নামাযে; আমার বাপের নামও “আব্বাস আলী”, তার নামেও সূরা পড়া লাগবে আপনার। নইলে এই মসজিদে আপনারে আমি রাখমু না।
Related Images:

মন্তব্য করুন