অনেক বাবা-মায়েরই তাদের বাচ্চাদের সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নেই! বাচ্চা ঠিকভাবে পড়াশুনা করছে না, ঠিকভাবে খাচ্ছে না, কথা শুনছে না, কথা বলছে না, স্কুলে যেতে চাইছে না, মিথ্যা কথা বলছে, অতিরিক্ত রাগ বা মেজাজ দেখাচ্ছে, পরিবারের অন্য সদস্যের সাথে মারামারি করছে, এমনকি অনেক সন্তান চুরিও করছে! তখন উনারা বাচ্চাকে নিয়ে আর আশার আলো দেখতে পান না!
দেখুন, প্রতিটি বয়সেরই ভিন্ন ভিন্ন আবেদন রয়েছে। একটি শিশুর জন্ম হয় একটি পরিবারে। তার প্রথম লার্নিং বা শিক্ষণটাই হয় তার পরিবার থেকে। মনে রাখবেন, শিশুরা তাই শেখে যা তারা দেখে। ওদের অবজারভেশন পাওয়ার ও অনুভূতি তীক্ষ্ণ!
একটি বাচ্চার তিনটি পরিবেশ রয়েছে, যার মাধ্যমে সে কোন কিছু শেখে। যেমন প্রথমতঃ তার বাড়ী বা ঘর, যে ঘরে তার বাবা, মা, ভাই, বোন বা আপনজনেরা থাকেন। দ্বিতীয়তঃ তার স্কুল! যেখানে সে পড়াশুনা শেখে। তৃতীয়তঃ তার বন্ধু-বান্ধব বা খেলার সাথী, আত্মীয়-স্বজন।
শিশু পরিচালনার ক্ষেত্রে একেক পরিবার একেক ধরণের পলিসি এপ্লাই করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বাবা-মার আচরণকে কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বোঝা যায়। কোন কোন পরিবার তার সন্তানটির ক্ষেত্রে রিজেকশন বা প্রত্যাখ্যান পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। সেটিকে আমরা রিজেকটিভ ফ্যামিলি বলতে পারি। আবার কোন কোন পরিবার সন্তানটির ক্ষেত্রে অতি রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে থাকেন! এটিকে আমরা ওভার প্রোটেকটিভ ফ্যামিলি বলতে পারি। আবার কিছু কিছু পিতা মাতা খুবই ডমিনেটিং বা স্বৈরাচারী প্রকৃতির হয়ে থাকেন। এটি ডমিনেটিং ফ্যামিলি।
প্রতিটি বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে ভালবাসেন, এটি অনস্বীকার্য। কিন্ত নিজের অজান্তে ছোট শিশুটিকে আমরা আমাদের মত করে চালাতে চাই, কখনও মনে করি না তারও একটি পৃথিবী রয়েছে। তারও চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা অনিচ্ছা রয়েছে। সেও মানুষ! কিন্তু মানুষের ক্ষুদ্র সংস্করণ নয়! তাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে সাহায্য করুন, তাকে তার নিজের কাজ নিজে করতে শেখান, তাকে কথার মাধ্যমে পুরষ্কৃত করুন, তাকে প্রশংসা করুন, বিশ্বাস করুন, এমনকি তার যে কাজটি আপনি পছন্দ করছেন না সেটি পজিটিভ ওয়েতে নিগেটিভ করুন এবং তাকে বুঝতে দিন আপনি তার আচরণে কষ্ট পেয়েছেন! আপনি তার বন্ধু হতে চেষ্টা করুন, তার কোন নিগেটিভ একটিভিটি চোখে পড়লে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করুন! কারণ পেলে সমাধানও সম্ভব। সর্বোপরি সে আপনার জীবনের গুরুত্বপুর্ণ একটি অধ্যায়, ব্যাপারটি তার সঙ্গে শেয়ার করুন!
বাচ্চাকে বয়স অনুযায়ী খেলাধুলা করার সুযোগ দিন, নিজেও তাদের সাথে খেলুন! কেননা, খেলার মধ্য দিয়ে সে নিয়মানুবর্তিতা, দলীয় মনোভাব, বুদ্ধিবৃত্তি ও খাপ খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সাইসাথে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুভমেন্টের ফলে পেশীশক্তি ও শারিরীক সক্ষমতা তৈরী হয়। শিশুকে প্রশ্ন করুন বা তার প্রশ্নের উত্তর দিন, কথার মধ্য দিয়ে শিশু সামাজিক হতে শেখে।
সন্তানের মনের ভেতর ঢুকুন, জানতে চেষ্টা করুন তার পৃথিবী সম্পর্কে! জেনে রাখুন, আপনার ছোট একটি আচরণ তার পৃথিবীটাকে একদিকে আলোকিত, আবার অন্ধকারও করে দিতে পারে নিমেষেই!
Related Images:

মন্তব্য করুন