কেউ সুখে নেই। দুনিয়া সুখে থাকার যায়গা না। দুনিয়া হচ্ছে অনন্ত সুখের পাথেয় সংগ্রহ করার যায়গা। এখানে চিরসুখী হতে চাইলে সে কষ্টে জর্জরিত হবেই। দুনিয়াতে কেবলমাত্র সেই সুখে আছে, যে সাধ্যমত পরকালের জন্য সত্যিকারভাবে কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
- যার বিয়ে হয়েছে, সে বলছে ‘বিয়ে করাটাই তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। কেন যে করতে গেলাম!’ আর যারা বিয়ে করেনি, তারা দিনরাত বিয়ের সপ্নে অধীর হয়ে আছে।
- যার বাচ্চা আছে, সে ‘বাচ্চাদের জালায় অস্থির হয়ে যাচ্ছি’ বলে দিনরাত অভিযোগ করছে। যার বাচ্চা নেই, সে একটা বাচ্চার জন্য দিনরাত কেঁদেকেটে মরছে।
- যার চাকরী আছে সে বলতেছে, চাকরি করা পেইন। প্রতিদিন এক জায়গায় যাওয়া আর একই কাজ করা কি যে বোরিং! আবার, যার চাকরি নাই সে বলতেছে চাকরির অভাবে অনেক কষ্টে আছে।
- যার সন্তান পড়াশুনা করতে বিদেশ চলে যাচ্ছে, সে ভাবছে অমুক সাহেব আর যাই হোক, অন্তত সন্তানদের চাইলেই দেখতে পাচ্ছে। আর আমি আমার সন্তানকে চাইলেও দেখতে পারছিনা। আবার যারা সন্তানকে সবসময় কাছে পাচ্ছে, তাদের আফসোস হলো সন্তানগুলোকে এত কষ্ট করে পড়াশুনা করালাম! অমুকের মাথামোটা ছেলেটা পর্যন্ত স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলো, আর আমার ছেলেটা কিনা এখনো দেশেই পড়ে আছে! বিদেশ যাওয়ার কোন ইচ্ছাই নাই! হায়রে কপাল! এত কষ্ট করে এজন্য পড়াশুনা করালাম?
- যে ইন্ড্রাস্টিয়াল চাকরি করতেছে, সে বলতেছে টিচিং প্রফেশানই ভালো। অল্প পরিশ্রমেও অনেক টাকা কামানো যায়। যে টিচার সে বলতেছে, কেন শুরুতে ইন্ড্রাস্টিতে ঢুকলাম না, এতদিনে লাখ টাকা বেতন হতো। সারাদিন চিল্লায়ে চিল্লায়ে কথা বলতে বলতে গলা শেষ হয়ে গেলো।
- যে বিদেশে আছে সে বলতেছে, দেশে একটা কোনমতে একটা চাকরি করে পরিবারের সাথে আরামে থাকতে পারতাম, হুদাই আসছি বিদেশে। যে দেশে আছে, সে বলতেছে অমুক অমুক বিদেশে গিয়ে কত মর্যাদার জীবন যাপন করতেছে, জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতেছে, আর আমি হতভাগা কোনমতে ছোটখাট একটা জব নিয়ে বসে আছি।”
- যার একটা নুন্যতম মাথা গুঁজার জন্য বাসা আছে, সে ভাবছে, ‘ধুর! একটা ফ্ল্যাটবাড়িই করতে পারলাম না! অমুক অমুক পর্যন্ত করে ফেললো! আর আমি এই এক পুরানা আমলের ঘর নিয়েই পড়ে থাকলাম সারাজীবন। আবার যে ফ্ল্যাটবাড়ি বানিয়েছে, সে একটা রাত শান্তিতে ঘুমানোর জন্য ছটফট করছে। অন্তরে একটু সুখ পাবার আশায় কত ব্যর্থ চেষ্টাই না করছে! মুভি, গান-বাজনা, সিরিয়াল, জোকস, ফানি ভিডিও কত কিছু! কিন্তু কোনটাই মনকে ভালোভাবে প্রশান্ত করতে পারেনা। সবগুলোই কিছুক্ষণ পর বিরক্তিকর হয়ে যায়। কোনটা দিয়েই অন্তরের অভাব দূর হয়না।
আসলে প্রকৃত সুখে আছেটা কে?
দুনিয়াতে কেবলমাত্র সেই সুখে আছে, যে সাধ্যমত পরকালের জন্য সত্যিকারভাবে কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্তরের অভাব মেটাতে রব্বে কারীমের কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। বারবার পা পিসলে যায়, কিন্তু তবুও রব্বে কারীমকে সন্তুষ্ট করার জন্য অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল এরাই প্রকৃতভাবে সুখে আছে। যেটাকে ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (র) “দুনিয়ার জান্নাত” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বাদবাকি সবাই কমবেশি কেবল অন্যদেরকে সুখী মনে করে আফসোস করে আর ভেতরে ভেতরে জলেপুড়ে মরে। আর এই আফসোস, একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এই প্রতিযোগিতা মৃত্যু পর্যন্তই। রুহটা চলে গেলেই সব খ ত ম।
“যেদিন তারা এটা(বিচার দিবস) প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে একটি সন্ধ্যা অথবা একটি সকালের অধিক অবস্থান করেনি”- (সূরা আন নাজিয়াতঃ ৪৬)
যারা একটি সন্ধ্যা বা একটি সকাল সুখে থাকার মোহে অনন্ত আখিরাতের জীবনের ব্যাপারে গাফেলতি করবে, পাথেয় সংগ্রহ করবেনা, তারা দুনিয়াতেও সুখ পাবেনা। আখিরাতেও না। ইন শা আল্লাহ্।
Related Images:
