দুনিয়ার মায়াজালের আসক্তিতে নিজেদের অজান্তেই আমরা ডিপ্রেশড হয়ে যাই৷ কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা, ইসলাম, ইমান আর ডিপ্রেশন এক অন্তরে একসঙ্গে থাকতে পারে না। যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আপনার হৃদয়ে আল্লাহ্ নাই, বরং ওখানে শয়তান বাসা বেঁধেছে।
কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের স্বীকার হন, তাহলে আপনার ইমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
অনেকেই বলবেন, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম…..!!
কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন আপনি?
- বউ ভালো না? হযরত লূত (আ) এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না।
- হযরত আছিয়া (আ) এর স্বামী ছিলেন কে জানেন? ফেরাউন। ফেরাউনকে ঈশ্বর না মানার অপরাধে তাঁকে টুকরো টুকরো করে কেটে গরম তেলের ডোবানো হয়েছিলো।
আরও শুনবেন? চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না, তাই ডিপ্রেশন?
- হযরত নুহ (আ) প্রায় হাজার বছর দাওয়াত দিয়ে মাত্র আশি জনকে দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন।
এরপরও আপনি কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন?
- হযরত বিলাল (রা) ছিলেন হাবশী ক্রীতদাস। ইসলাম কবুলের অপরাধে তাকে মরুভূমির রোদে ফেলে রাখা হতো, তার গায়ের চর্বি গলে যেতো। তারপরও তার মুখে লেগে থাকতো প্রশান্তি, রোদের তেজ তাঁর কালিমার তেজের কাছে পরাজিত হতো।
- ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা তাঁর জীবনে আট বছর জেল খেটেছেন। জেলেই মরেছেন। অথচ তিনি কী বলেছিলেন, জানেন? বলেছিলেন, দুনিয়াতেও একটা জান্নাত আছে, আমি আমার হৃদয়ে সে জান্নাতের খোঁজ পেয়েছি।
- আম্মাজান খাদিজা(রা) খুব ধনী ঘরের মেয়ে ছিলেন। বিলাসিতার মধ্যেই বড় হওয়াটাই স্বাভাবিক। নবিজীর ইসলাম প্রচারের কারণে অন্যান্য গোত্র যখন কুরাইশদের অবরোধ দিলো, তখন নবিজী আর আম্মাজান খাদিজা রাযি এর, গোত্রের শিশুদের আড়াইবছর তীব্র কষ্টে থাকতে হয়েছিলো। এমনকী খিদের তাড়নায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়েছিলেন।
যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় তাদেরকে বলা হলো পথভ্রষ্ট!!
পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে? (সূরা হিজর, ৫৩-৫৬ নং আয়াত)
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ -সূরা ইউসুফ (১২) : ৮৭
শুধু তাই না আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গুনাহ।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে র্শিক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১)
শেষকথা:
গান শোনা, মুভি দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া বা মানুষের সাথে আড্ডা দিয়েই যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলতো, তবে লিনকিন পার্কের শিল্পী আত্মহত্যা করলেন কেন? কিংবা সুশান্ত শিংই বা সুইসাইড করলেন কেন? মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন?
- ডেল কার্নেগি । এখন পর্যন্ত যার মোটিভেশনাল বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করা হয়, সেই ডেল কার্নেগি শেষ জীবনে আত্মহত্যা করেছেন। মোটিভেশনের ফেরিওয়ালা নিজের বেঁচে থাকার এতটুকু মোটিভেশন জোগাড় করতে পারলেন না!!
- লিনকিন পার্ক । যে ব্যান্ড এর গান শুনে আমাদের রাত্রি ভোর হয়, প্রবল উৎসাহ পাই, অনেকে যার গানে বেঁচে থাকার উনাদান খুজেন, সেই ব্যান্ড এর নামকরা শিল্পী নিজের গানে নিজের বাঁচার উপাদান খুঁজে পেলেন না। শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করলেন।
- চার্লি চ্যাপলিন । সর্বকালের সেরা কমেডিয়ান। পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষকে হাসানো মানুষটির বোকা হাসির আড়ালে কী ব্যথা লুকিয়ে ছিলো, কেউ জানলো না। নিজেকে শেষ করে দিলেন।
গান বাজনা বা মুভি, বই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে স্থায়ী মুক্তি দিতে পারে না।
তাহলে সমাধান কী?
ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো আল্লাহর দিকে ফেরত আসা।
আপনার শয়তান যখন আপনাকে বলছে তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই, তখন আল্লাহ্ তাআলা বলছেন-
কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।
[সূরা আলাম নাশরাহ (৯৪) : ৫-৬]
জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়। [১৩:২৮]
আল্লাহ্ তাআলার দিকে ফিরে আসুন।
কুরআনের দিকে ফিরে আসুন।
যে অন্তরে রাহমানুর রাহীমের ভালোবাসা থাকে, যে হৃদয়ে আল্লাহ্ থাকেন, সে হৃদয়ে ডিপ্রেশন থাকতে পারে না।
কোনোভাবেই না।
—–O—–
কোরআনের এই আয়াতগুলো খুব খুব অর্থপূর্ণ …
“আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। জেনে রেখো, আল্লাহর রহমত থেকে কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।!”
– সূরা ইউসুফ : ৮৭
“আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দিবেন।”
– সূরা ত্বলাক : ৭
“নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি।”
– সূরা ইনশিরাহ : ৬
“আমি তো আমার দুঃখ ও অস্থিরতাগুলো আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করছি।”
– সূরা ইউসুফ : ৮৬
“জেনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটে।”
– সূরা বাক্বারা : ২১৪
“আল্লাহ কোনো ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের চাইতে বেশী, এমন বোঝা চাপিয়ে দেন না।”
– সূরা বাক্বারা : ২৮৬
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।”
– সূরা বাক্বারা : ১৫৫
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।”
– সূরা বাক্বারা : ১৫৩
“হে আল্লাহ, আমি তো কখনো আপনাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি।”
– সূরা মারইয়াম : ৪
Related Images:
