যদি আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্য এসে বলে, বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে যাওয়ার মন্ত্র দেবে সে আপনাকে! চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, অতীতের ঠিক কোন সময়ে ফিরে যেতে চাইবেন?
আমি যেতে চাইব, সেই শ্যাওলা জমে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া হলদে দালানে, সামনে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, মাঠের এক প্রান্তে একটি পুকুর। তার একপাশে আপন গতিতে উড়ে চলছে জাতীয় পতাকা। সেই মাঠে জাতীয় পতাকার সামনে সোজা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে একসাথে শপথ পাঠ আর সমস্বরে গাওয়া জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”।
সুরেশ্বর, আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম। পদ্মারকোল ঘেসে বেড়ে ওঠা শরিয়তপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সুরেশ্বর। কালের বিবর্তনে সুরেশ্বর তথা এই ভাঙ্গন কবলিত জনপদে অনেককিছুই তৈরি হয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম “সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়” সময়ের স্রোতে আজ “সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়” সাফল্যের সাথে পার করেছে ৫০ টি বছর এবং তার সাথে যুক্ত করতে পেরেছে মহাবিদ্যালয় ও।
ততকালীন সময়ে এই অঞ্চলের মানুষকে পড়াশুনা করতে যেতে হতো পদ্মা পার হয়ে সূদুর চরআত্রা কিংবা পন্ডিতসার। স্বাধীনতার পূর্বে এই ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চলে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ অনেকটা দুঃসাহসের মত ছিল। সেই দুঃসাহসিক কাজ সাহসের সাথে করেছেন ১৪ জন মহানব্যক্তি। তাদের ওই সময়ের দুঃসাহসের ফসল ই “সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহা বিদ্যালয়“।
তাদের মহৎ উদ্দোগের কারনে আমি পেয়েছি আমার প্রিয় বিদ্যাপাঠ। শৈশব আর স্কুলের গল্প করতে গেলে বন্ধুদের কথা আগে বলা দরকার। বন্ধু ছাড়া স্কুল আর শৈশব আমি চিন্তা করতে পারি না। বন্ধুগুলোকে আমার অস্তিত্ব মনে হতো। কে বেশি কাছের তা আলাদা করা কঠিন। যাদের কথা লিখতে গেলে হয়ত শেষ করা যাবে না। স্কুলের গল্প করতে গেলে স্যারদের কথা না বলা অন্যায়। হ্যা! আমি পেয়েছি মরহুম জনাব আব্দুর রব (আই.কম), জনাব মাওলানা মনোয়ার হোসেন স্যার সহ অন্যান্ন সব জনপ্রিয় শিক্ষকদের, যাদের আদর,ভালবাসা,শাষন ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। স্কুল জীবনের স্মৃতি লিখতে গেলে কলম ফুরিয়ে যাবে। এত এত মধুর স্মৃতি মনে করতে গেলে আমার নিজেকে সেই মহান ব্যক্তিদের কাছে চিরঋণী মনে হয়। যাদের অবদানের কারনেই আমরা পেয়েছি “সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহা বিদ্যালয়” এর মত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমার স্মৃতিচারণে ১৪ জন মহৎ ব্যক্তিদেরকে উৎসর্গ করতে যেয়ে আমার মনে পরে যায় প্রিয় শিক্ষাগুরু মরহুম জনাব আব্দুর রব (আই.কম) স্যারের ক্লাসে পড়া একটি ভাব সম্প্রসারণ এর কথা……….
“কীর্তিমানের মৃত্যু নেই“
পরিশেষে বলব চারিদিকে আধুনিকতার এত এত গ্যাজেটের হাতছানিতেও মনে হয়—
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা,
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
মেহেদী হাসান (মৃদুল)
ব্যাচ ২০১০
সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়
Related Images:
পদ্মারকোল ঘেসে বেড়ে ওঠা শরিয়তপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সুরেশ্বর। সুরেশ্বর, আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম। নেশা ঘুরে বেড়ানো, বই পড়া, ছবি তোলা আর টুকটাক লেখালেখি। পেশা ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা’।